হোলি উৎসব - হিন্দুদের এক অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান
বন্ধুরা এবং
পরিবারের সদস্যরা রংয়ের সাথে হোলি উদযাপন করে হোলি হল সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু
উৎসবগুলির মধ্যে একটি। ঐতিহ্যবাহী হোলি হোলিকা দাহানের পরের দিন হোলি বা রং খেলা
হয়। হোলিকা বধ বা হোলিকা পুড়িয়ে ফেলা পুরাতন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, হোলিক মূর্তি পুড়িয়ে ফেলা তথা মনের মধ্যে
থাকা যত পাপ, খারাপ দিক সব
কিছুকে পুড়িয়ে ফেলাকেই বঝায়। এর পর আসে হোলির দিন মানে হোলিকা দহনের পরের দিন
পূর্ণিমা শুভ সময় হিসাবে ধরা হয় এর মানে কিছুটা এরকম যে প্রথমে মনের মধ্যে থাকা যত
খারাপ, কিংবা পাপ আছে তা
প্রথমে ধ্বংস করে পূর্ণ অর্জন করার জন্যে ভগবানের পর্ণ হোলি খেলার নিজেকে অংশ
গ্রহন করা ও পূর্ণ হওয়া সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিবার, বন্ধুদের কেও এই খালায় অংশ গ্রহন করা। অতএব
হোলি উৎসব এর আগে হোলিকা দহন করা এবং অংশ গ্রহন করা একটা ধর্মীয় রিতিনিতি যা
অবশ্যই পালন করা আমাদের কর্তব্য। হোলি উত্সবে ভারতে প্রতি অঞ্চলে সুখের রঙ আনে,
আনে প্রতিটি বাড়িতে,
এই উত্সব সুখের রঙ দেয়,
তাই এই উত্সবটি রং উত্সব
বলা হয়। যেমন প্রকৃতি তার আলো, বায়ু, জল, সমস্ত জীবকে কোনও পার্থক্য ছাড়াই বিতরণ করে। অনুরূপভাবে, হোলির রংগুলি এমন কোনো বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত
জীবকুলে খেলা করে। আবীরের রঙে রঙিন রং সব
রঙিন হয়ে যায়। সমাজের সব জীবকুলে এমনকি সমস্ত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এই রং
সবারে মধ্যে ছরিয়ে পরে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে। সমাজের উচ নিচু ভেদাভেদ মিশে যায় এই
দিন সবাই রঙ্গিন এই দিন, সবাই এক রঙ্গিন,
হাসিখুশি এবং সুখশান্তির
দেশে চলে যায় এই দিন। তাই হোলি এক সমাতা বৃদ্ধি, ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করার উৎসব। হোলির প্রভাবে
ধরনি রঙ্গিন করে তা নয় আসলে এই উৎসব মানুষের জীবনেও রং এনে রঙ্গিন করে তোলে। হোলি
উপলক্ষে, বিভিন্ন ধরনের
অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়।
কখন এই হোলি উৎসব পালন করা হয়
হোলি হিন্দুদের
জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বসন্ত উৎসব, ভারতের একটি জাতীয় ছুটির দিন এবং নেপালের অন্যান্য দেশে আঞ্চলিক ছুটির দিন।
অনেক হিন্দু এবং কিছু অ হিন্দু, এটি একটি
ক্রীড়ামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে হোলি উৎসব দেখা
যায়। শিত কালের শেষ হলে বসন্ত কালের শুরুতে কিংবা মাঝামাঝিতে এই উৎসব হয়। ইংরেজি
ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ মাসে এই উৎসব হয়। বসন্ত কালের প্রকৃতি নানা রঙের ফুল ফোটে
গাছে গাছে, পরিযায়ী পাখির
দেখা মেলে এই সময়। মাটি শুষ্ক হয়ে যায় ধুলা ঢাকা রাজ্যে আবির, রং যেন আরও রঙ্গিন করে তোলে।
হোলি কেন পালন করা হয়?
পুরানে এর ভুমিকা কি?
এই উত্সবে অনেক অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়, পরিবারের সব সদস্য এবং আত্মীয় একসাথে হোলিকা পুড়িয়ে দেয় এবং হোলি দিবসের
পালন করে। এই হোলিকার মৃত্যু এবং প্রতিবছর সে উপলক্ষে হোলিকা পুড়ান হোলির রং খেলার
সঙ্গে জরিত। আমাদের উৎসবগুলির প্রাচীন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এটি বলা হয় যে
প্রাচীনকালে হিরণ্যকশিপ নামের একটি রাজা ছিলেন। তিনি নিজেই প্রজাদের কাছে নিজেকে
ঐশ্বরিক বলে ডাকতে বাধ্য করতেন, এবং বলতেন যে, যে তাকেই(রাজা
হিরণ্যকশিপ) কেবলমাত্র পূজা করা উচিত। দরিদ্র লোকেরা ভয় করত এবং তার পূজা করতে
লাগল ইশরের মত। তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ - যিনি ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। ভগবান বিষ্ণু
ছাড়া অন্য কোন দেবতাকে তিনি মানতেন না। কিন্তু তার পিতা রাজা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণু
বিরধিতা ছিলেন। হিরণ্যকশিপু তাঁর পুত্রের এই বিষ্ণু ভক্তি সহ্য করতে পারলেন না এবং
তাঁর পুত্রকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন। একদিন তার বোন হোলিকার সঙ্গে জ্বলন্ত
আগুনে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন, কেননা তিনি জানতেন যে হোলিকাকে আগুল পুরতে পারবে না। তাই তিনি দুজনকেই
জ্বালান্ত আগুনে ফেলে দিলেন। কিন্তু সব উল্টো হয়ে গেলে তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ বেচে
গেলেন কিন্তু হোলিকা আগুনে পুরে গেলেন। এখানে একটা কথা স্পস্ট ছিল যে জার মনে খোপ
থাকবে সে পুরে যাবে কিন্তু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন এক কঠর ভগবান বিষ্ণু ভক্ত তাই
তার কিছু হয় নি, কেউ কেউ মনে করে যে এর
থেকেই হোলি নাম হয়েছিল এবং হলির দিন হোলিকাকে পোরান হয়। হোলিকাকে পোড়ানোর মাধ্যমে
ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি অনুসরণ করে যে কেউ, তার জীবনের সমস্ত নেতিবাচক বিষয়গুলি দূর করে এবং একটি ইতিবাচক কাজ শুরু করে।
হোলি তারিখ এবং সময়
হোলি হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে পালিত হয়। ফাল্গুনের পূর্ণ চন্দ্র দিবসের
দিন হোলি উত্সবের বা দোল উৎসবের দিন হিসাবে ধরা হয়, যা ফাল্গুন পূর্ণিমা নামে পরিচিত। হোলিকা দাহের পরের দিনটি হলি হিসাবে পালিত
হয়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হোলি উৎসব পালন
হোলি প্রধানত উত্তর ভারতীয় রাজ্যে উদযাপন করা হয়। উত্তরপ্রদেশ, বিহার রাজ্যে সবচাইতে
বেশি করে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দুই রাজ্যে ভগবান কৃষ্ণ ও রামের জন্মভুমি ও
হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন মন্দির ও তীর্থস্থান এই দুই রাজ্যে হওয়ায় বছরের বিভিন্ন সময়
দেশ বিদেশ থেকে পর্যাটক আসে, কিন্তু এই সময় হোলি উৎসব উপলক্ষে প্রচুর মানুষের ভির হয়। মথুরায় ভগবান কৃষ্ণর
জন্মভুমিতে সাতদিন ধরে রঙের উৎসব চলে, এই সময় ভগবানের উদ্দেশ্যে ভগবানের লিলা খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাটক ও
অনুষ্ঠান হয়। শুধু উত্তর ভারতের এই দুই রাজ্য ছাড়াও ভারতের অন্য রাজ্যেও হোলি উৎসবের
অনুষ্ঠান হয়। আসামে এই হোলি উৎসবের সমায় রঙ্গালি বিহু শুরু হয়। পচ্চিমবঙ্গ থেকে
শুরু করে সারা দেশেই এই উৎসব উৎযাপন করা হয়। দক্ষিণ ভারতেও এই রঙের উৎসব পালন করা
হয়।
ভারতের বাইরে হোলি উৎসব পালন
ভারতের বাইরে হোলি উৎসব পালন করা হয়। নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে
হোলি উৎসব পালন করা হয়। ইউরোপ মহাদেশে এবং আমেরিকা মহাদেশে প্রবাশি ভারতিরাও হোলি
উৎসব পালন করে এবং রং খেলে। কিন্তু ভারতের মতো এতো রং এতো অনুষ্ঠান বিদেশে পালন
করা হয় না।
পরিশেষে বলা যায় যে এই হোলি উৎসব রং, আবির দিয়ে মাখামাখি করার উৎসব। এই উৎসবে সমাজকে এই স্রতে ভাসতে শেখায়। সমাজের
উচু-নিচু ভেদাভেদে সবাইকে এক করে ও কান্না-হাসি, হাসি-খুসির মাঝেও জিবনের সাধকে নতুন করে তোলে রঙ্গিন করে তোলে প্রাকৃতিকে
সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র জিবকুলকে। হোলির রঙ্গে আজ আমরা সবাই রঙ্গিন।
No comments: