Header Ads

সুস্থতার জন্য শরীর চর্চার উপকারিতা ও পদ্ধতি

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর ঠিক তো সব ঠিক। শরীর সুস্থ থাকলে সব কিছুই ভালো লাগে। সুস্থ দেহ এবং সুস্থ মন- সুস্থ  মানসিকতার শিল্প বহন করে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমরা কতো কিছুই না করি। শরীরকে সুস্থ এবং মনকে নির্মল রাখার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করার গুরুত্ব অপরিসীম
শরীর চর্চার উপকারিতা ও পদ্ধতি


শরীর চর্চার উপকারিতা : 
আমরা বলি শরীর চর্চা করা উপকারী। কিন্তু কতটুকু উপকারী, তা আমরা অনেকেই জানি না। শরীর চর্চার উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। তারপরও বিশেষ কিছু উপকারিতা আলোচনা না করলেই নয়! জীবন সুস্থ রাখার জন্য শরীর চর্চার কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, শিশুকাল থেকে শুরু করে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত সবারই শারীরিক সুস্থতার জন্য শরীর চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করা দরকার

১। শরীর চর্চার ফলে একজন বৃদ্ধকেও তরুণ দেখায়

২। নিয়মিত শরীরচর্চাকারীকে বিষণ্নতা কিংবা হতাশা সহজে গ্রাস করতে পারে না

৩। নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম কর্মস্পৃহা বাড়ায়। শরীর চর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন পুষ্টি সরবরাহ হয়। ফলে আমাদের হৃদ্যন্ত্র এবং রক্তনালি সচল থাকে। এতে করে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়

৪। নিয়মিত শরীর চর্চা ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করে। আধুনিকজীবনে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে গিয়েছে। হাঁটাহাঁটির প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। আর আমাদের খাদ্যাভ্যাসও বদলে গিয়েছে। ফলে দিনে দিনে ক্রনিক রোগব্যাধি, যেমনহৃদরাগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অস্থিক্ষয়, ক্যানসার ইত্যাদি প্রকোপ বহুগুণে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ৬০ ভাগ মানুষ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন না এবং উন্নত বিশ্বে হার অনেক বেশি। শুধু শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাজনিত কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে ১৯ লাখ মানুষ মারা যায়। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাজনিত কারণে ১০-১৬% ডায়াবেটিস হয়ে থাক। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে যাদের শারীরিক ফিটনেস বা যোগ্যতা কম অথবা মাঝামাঝি, তাদের শারীরিকভাবে যোগ্যদের তুলনায় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি গুণ বেশি। কোনো ডায়াবেটিক রোগী যদি দৈনিক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হাঁটেন তবে তার ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যু হার ৩৯% এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যু হার ৩৪% কমে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম শরীরে ইনসুলিনের সহনশীলতা বাড়ায়

৫। নিয়মিত শরীর চর্চা দাম্পত্য জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনে

৬। নিয়মিত শরীর চর্চায় শরীরের ওজন কমে। যাদের ওজন বাড়তি, তাদের শরীর চর্চার কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক পরিশ্রম করলে ক্যালরি খরচ হয়। এভাবে আমরা যতই শারীরিক পরিশ্রম করবো, ততোই আমাদের ক্যালরি খরচ বাড়বে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে

৭। নিয়মিত শরীর চর্চা মনকে চাঙা করে। শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক-অমানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়

৮। নিয়মিত শরীর চর্চা সুনিদ্রা আনয়ন করে। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য শরীর অত্যন্ত উপকারী। শরীর চর্চা অনিদ্রা দূর করে, অতি নিদ্রা হ্রাস করে। অবশ্য একেবারে ঘুমানোর আগে শরীর চর্চা করা উচিত নয়। কারণ, শরীর চর্চার পরে মানসিক চাঙা ভাবের কারণে ঘুম আসা বিলম্বিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যুষে শরীর চর্চা করা উপকারী। ছাড়া সন্ধ্যার আগে বিকেলটাও শরীর চর্চার জন্যও উপযুক্ত সময়। যেহেতু শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে শরীরের ঘাম ঝরে, তাই নরম আবহাওয়াতেই শরীর চর্চা করা ভালো

শরীর চর্চার কতিপয় সহজ পদ্ধতি: 
প্রথমত. ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীর চর্চা করা যেতে পারে। কিন্তু কর্ম ব্যস্ততার কারণে তা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজ শেষ করে আলাদাভাবে শরীর চর্চা করার সময় মেলানো অনেকটা দুষ্কর ব্যাপার। তবে আমরা চাইলে দৈনন্দিন হাঁটা-চলা কাজ-কর্মের মাঝেও বিভিন্ন ধরনের শরীর চর্চা করতে পারি।

১। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করা। এটা শরীরের জন্য বেশ উপকারী

২। কোথাও কাছাকাছি যেতে হলে সময় করে সেখানে হেঁটেই যাওয়া

৩। লিফট্ কিংবা চলন্ত সিঁড়ির পরিবর্তে সাধারণ সিঁড়ি ব্যবহার করা। সিঁড়িতে ওঠার সময় প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি শরীরকে নাড়ানো বা পা ছড়িয়ে হেঁটে বাহুর মাঝখানে হালকা চাপ সৃষ্টি করা

৪। শিশুদের বিকাশের জন্য শরীর চর্চা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের শরীর চর্চার ব্যাপারে চিকিৎসকগণ বিভিন্ন খেলাধুলার কথা বলে থাকেন। যেমন:- হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, সাইকেল চালানো, টেনিস, সাঁতার কাটা, জগিং, হাঁটা, দৌঁড়ানো, কুস্তি, পাঞ্জা প্রভৃতির মাধ্যমে শিশুরা শরীর চর্চা করতে পারে। তবে এসব করতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করা যাবে না। সব কিছু করতে হবে নিয়মমাফিক। অর্থাৎ পড়ার সময় পড়া,  খেলার সময় খেলা। তাহলে উভয়ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যাবে

৫। যাদের সাতাঁর কাটার বাতিক আছে তারা বিভিন্ন ধরনের সাঁতার কেটে শরীর চর্চা করতে পারেন

৬। ঘুমও শরীর চর্চার অন্যতম বিষয় বলে বিবেচিত হয়। নির্ঘুম রাত মাথা ব্যথা শরীর অসুস্থের কারণ। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানার মধ্যে সোজাসোজি শুয়ে পড়ে, পা, হাত উপর-নিচে ওঠা নামা করে শরীর চর্চা করা যায়। দিনে ঘুমের চাইতে, রাতে পরিমিত ঘুম সবচে উত্তম

৭। বুক-ডাউন : ঘরে করা শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয়। এই ব্যায়ামে কাঁধ এবং হাতের উপর যথেষ্ট চাপ পড়ে যা হাত এবং কাঁধের মাংসপেশীকে আরো দৃঢ় করে। এই ব্যায়ামের জন্য আপনার পা কে পিছনের দিকে সোজা ছড়িয়ে দিন। তারপর দুই হাতকে সামনে প্রসারিত করে পিঠ সোজা রেখে বুক-ডাউন দিন। দেখবেন হাতের মাংসপেশী বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে

৮। শরীর সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে শরীর চর্চা হিসেবে সংসারের বিভিন্ন কাজও করতে পারি। ঝাড়ু দেওয়া, কাপড় কাচা, শিল-পাটায় মসলা বাটা ইত্যাদিতে শরীরের ভেতর এক ধরনের কম্পন তৈরী হয়, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা যদি ঘরের কাজ করি, তাহলে একদিকে সংসারে সদস্যদের যেমন সহজ হবে, তেমনি কাজকে আর কাজ মনে হবে না; মনে হবে শরীর চর্চা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে হাত-পা নড়াচড়া করানো এবং ঘাড়-কোমর ঘুরানো। আরো বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর পদ্ধতিতে শরীর চর্চা করা যেতে পারে

৯। যাদের পেট বেড়ে গিয়েছে, তারা পেটের ব্যায়াম কার্ডি করা যেতে পারে। অর্থাৎ পেটের ওপর চাপ সৃষ্টিকারী চর্চাগুলো করা যেতে পারে

১০। দড়ি-লাফ অথবা শুধু লাফানোটাও বেশ উপকারী


No comments:

Powered by Blogger.